স্মৃতির ডায়রি থেকে
-স্বপ্ননীল
“ আজ বাইরের আবহাওয়া, আর মনের আবহাওয়া বোধ হয়
যুক্তি করেছে । অনেক দিন প্রকৃতি বৃষ্টির ছোঁয়া পায় নি। আমার হৃদয়ের ধুলিমাখা
স্মৃতির পাতাটাও অবহেলার কারনে অস্পষ্ট হয়ে ছিল। আজ বাইরের বৃষ্টি আর হৃদয়ের
বৃষ্টি এক হয়ে ধূলিমাখা স্মৃতির পাতাটাকে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর করছে। ভাগ্যিস পাতাটা হৃদয়ে শ্বেতপাথর দিয়ে খোদাই করা ছিল। তাই মুছে যায় নি, কোন অস্পষ্টতা নেই বরং স্মৃতির বরষায় পাতাটা আরও ঝকঝক করছে।কিন্তু এই
স্পষ্ট পাতাটাই আমাকে আবারো কুড়ে কুড়ে খাবে । তবে কেন আমি স্মৃতির পাতাটাকে ধুয়ে
মুছে পরিস্কার করলাম। যা শুধু মনের অব্যক্ত ,লুকানো বেদনাময় ব্যাথা গুলোকে আবার
আগের মতো দাড় করাবে। আবারো কাঁদাবে আমায় বর্ষার মেঘের মতো, সমুদ্রের উত্তাল
জলরাশির মতো। আমি সত্যিই খুব অসহায় হয়ে পড়ছি। দোহাই তোমার আমাকে আর কাঁদিয়ো না।
আজ ইংরেজি সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ ।বাংলা
তারিখটা আমার জানা নেই। তবে বাংলা ১৪১৩ সাল।
আমি কোন কিছু
লেখা শুরু করলে তা শেষ করতে পারি না। আমার আবেগ আমাকে কখনই শেষ করতে দেয় না। আমি
ধৈর্যশীল, তবে স্মৃতির পাতা খুঁজতে থাকলে আমার আবেগ আমাকে স্থির থাকতে দেয় না।
আমি সাহিত্যিক
না, সাহিত্যের ভাষাও আমার নেই,তাদের মতো ধৈর্যও নেই। তাই আমি কোন কিছুই শেষ করতে
পারি না। জীবনের প্রবাহমান জলধারায় যা কিছু আসে তাই স্মৃতিকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সব
স্মৃতি আমাকে ব্যস্ত করে ।কাউকে কম মনে হয় না। তাই কোনটাই শেষ করা আমার সম্ভব হয়
না।
যা লিখতে
চাচ্ছিলাম..................
মানুষের জীবনের
স্মৃতিগুলো মানুষের জীবন চলার পথের সঙ্গী । আমি জানি, আমাকে যদি সবাই ছেড়ে যায়,
সবাই যদি আমাকে ভুলে যায়, সবাই যদি আমাকে ঘৃণার চোখে দেখে, যদি সবাই আমাকে দূরে
ঠেলে দেয় ,তবুও আমার স্মৃতি গুলো আমাকে কখনই
ছাড়বে না। সে যে আমার সংজ্ঞাহীন, নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সঙ্গী ”।
নীলের ডায়রি তে এততুকুই লেখা। অনেক খোঁজাখুজি করেও এর
চেয়ে বেশি কিছু লেখা পাওয়া গেলো না। ডায়রির একেবারে শেষে শুধুমাত্র একটি বাক্য
“যদি কখনো ভালোবাসা হারিয়ে যায় , তখনই ভালোবাসা কি জিনিস তা বুঝা যায় ”
মেঘার দু’টি চোখ অশ্রুসজল হয়ে
গেলো। নিজের অজান্তেই ডায়রিটা বুকের সাথে জড়িয়ে আনমনা হয়ে ভাবতে লাগল। অতীতের সেই
স্মৃতিগুলো। দু’চোখের জল কপোলের তিলে এসে জানিয়ে গেলো, “তুমি আজ বহুদুরে” ।
মেঘা আর নীলের পরিচয় , প্রেম , বিরহ, বিচ্ছেদ সবই আজ শুধুই অতীতের স্মৃতি।
আজ মেঘার মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব প্রেমের ইতিহাসের চেয়ে তার
প্রেমের ইতিহাস কম নয়। পৃথিবী কে আজ কেন জানি মনে হচ্ছে নির্জীব, নিস্প্রান কোন
মরুভূমি।
তখন নীল ও ওর বাবা মা থাকে ভাড়াটে বাসায়। নীলের বাবা এক বছর যাবত অবসর
নিয়েছেন।ছেলে কে মানুষ করার জন্য শহরের থাকলেন । বাড়িতে জমিজমা আছে ত্রিশ-
পঁয়ত্রিশ বিঘা। বেশিরভাগ সময় নিলয়ের বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। সপ্তাহে দুই দিন
বা একদিন বাসায় থাকতেন। দুই রুম বিশিষ্ট ভাড়া বাসায় থাকে নীল, নীলের মা আর নীলের
ছোট বোন।
ওদের রুমের পাশে আরও দুটো রুম। ভাড়াটে ছিল, কিছুদিন আগে বাসা ছেড়েছে । নুতন
ভাড়াটে আসার প্রতিক্ষায় রুমগুলো নিষ্প্রাণ চোখে চেয়ে আছে। কিছুদিন যাবত এক ভাড়াটে
আসার কথা হচ্ছে। ভাড়াটের তিন মেয়ে ।বড় মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ে। তার ছোট ক্লাস টু তে
আর তার ছোট টা নীলের বোনের সমবয়সী, বয়স টা বছর চারেক।
হঠাৎ একদিন সকালে এক লোক এলেন । বোধ হয় এই লোকটিই সেই নুতন ভাড়াটিয়া। হ্যাঁ
ধারনা টা সত্যি হল। একে একে সব মালপত্র এসে নামলো। বিকেলে পরিবারের অন্যান্য
সদস্যরা এলেন।
তখন জানালার পাশে বসে নীল বই পড়ছিল। কি যেন কারনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল
নীল।
“কি ব্যাপার এই মেয়েটা কে?” আপন মনে বলে উঠল নীল। “ মানুষ এত সুন্দর হয়
কি করে? পৃথিবীর সব সৌন্দর্য কি তাহলে সৃষ্টিকর্তা ওই মেয়েটা কেই দিয়েছে”?
No comments:
Post a Comment