হৃদয়ের আস্ফলন
নীলকান্ত
অথৈই সমুদ্রের মাঝে দাড়িয়ে
আছে
দুটি দ্বীপ।
তার একটিতে তুমি, অন্যটিতে আমি।
দুজনার দেখা নেই, কথা নেই,আছে শুধু
প্রত্যাশা।
তা কি জানো?
একদিন তোমায় পাব।।
নির্জনে তোমার কথা হয়
সমুদ্রের সাথে।
আমার কথা হয় তোমার দিকে
বয়ে
যাওয়া বাতাসের সাথে।
শুধু কথা হয়না তোমার
আমার।
সমুদ্রের বাতাসে বলাবলি
করে।
কিন্তু সে কথা তুমি বুঝো
না।
বুঝিনা আমিও।
তুমি কান পেতে থাক
বাতাসে
আর আমি সমুদ্রে।
এমনি ভাবে আমাদের
কথাগুলি
জমা হয়।
একদিন বলা হবে বলে।
তোমাকে পাব বলে।
মাঝে মাঝে সমুদ্রটা
উত্তাল হয়,
বুঝি, তোমার কথা সে
আমাকে বলছে।
বাতাসের তাণ্ডব চলে,
বুঝি আমার কথা তোমার
কানে পৌঁছেছে।
সমুদ্রের উত্তাল জলরাশি
আমাকে
বলে-
তুমি নাকি খুব কষ্টে
আছো।
অবিরত তোমার চোখে অশ্রু
ঝরে
তোমার হৃদয়ের জলোচ্ছ্বাসে,
সবকিছু উন্মাদ হয়ে গেছে।
নির্বাক সমুদ্রটাও।
তোমার চোখের অশ্রু
সমুদ্রের
জলে মিশে, হয়েছে
প্রলয়ংকারি
জলোচ্ছ্বাস।
ভেসে গেছে সব।
শুধু ভাসিনি আমি।।
বাতাসের তাণ্ডবে বুঝেছি-
তোমার হৃদয়ে বয়ে চলেছে
একহাজার মাইল
বেগে টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়।
অবিচল অতঃপর-
চেয়ে আছো আমারি পথ চেয়ে
আমারি মত করে।
যদি আরেক জনম পাই
নীলকান্ত
এ জীবন শেষ হবে,
কিন্তু তোমায় পাওয়ার আশা
শেষ
হবে না।
এ জীবনের পরে যদি আরেক
জীবন
পাই। আর সে জীবনে আমাকে
যদি বলা হয়-
“ বল, তুমি কি হতে চাও”?
তবে সে জীবনে আমি তোমার
চোখের অশ্রু হব।
তারপর যদি আরেক জীবন
পাই। আর সে জীবনের
ইচ্ছার কথা বলা হয়-
“ বল এ জীবনে তোমার কি
ইচ্ছে?”
তবে বিধাতাকে বলব,
আমি শুধু আমার
প্রিয়তমাকে চাই।
যদি আরেক জীবন পাই,
তবে আমি তোমার চোখে
স্বপ্ন
হব।
তোমার নিদ্রাচ্ছন্ন চোখে
স্বপ্ন
দেখব ভালবাসার।
স্বপ্নাচ্ছন্ন চোখের
পাতায় চুমু দিয়ে
স্বপ্ন ভাঙাবো তোমার।
তোমার চোখের অশ্রু হয়ে
হবে জন্ম আমার।।
আর-
চোখের কার্নিশের
দু’ফোঁটা জল হয়ে
গাল বেয়ে ঠোঁটের কোনায়
সমাপ্তি হবে আমার।
তবুও সুখ,
আমি ছুয়েছি ভালবাসা
তোমার।
কষ্ট লাগে
নীলকান্ত
এভাবে এমন করে কথা বল না
কষ্ট লাগে।
বরফের ছুড়ি যেন, হৃৎপিণ্ডটা
এ ফোড়- ওফোড় করে।
এভাবে, এমন করে কথা বল না,
কষ্ট লাগে।
কত চন্দ্র রাতে,
কত রিমঝিম বর্ষায়
তোমার
কথা শুনতে ব্যাকুল হতাম,
বৃষ্টি
ছুয়ে তোমার স্পর্শ কুড়াতাম।
জ্যোৎস্না দেখে, তোমায় দেখার
সাধ মিটাতাম।
আজ সেই আমি,
তোমার কথার বাণে ক্ষত-বিক্ষত,
সাজানো স্বপ্ন গুলো ভেঙে হয়েছে চুরমার,
বুকের ভেতর কষ্টের আর্তনাদ
অবিরত।
আর ভালো লাগে না-
কষ্ট লাগে।
এভাবে আর এমন করে কথা বল না
কষ্ট লাগে।।
কষ্ট
নীলকান্ত
একবার যখন, বুকের পাঁজর ভেঙ্গেছিল
আমি কেঁদেছিলাম।
একবার যখন মন
দিয়েছিলাম
আমি ভেবেছিলাম,
আমি নিশ্চুপ ছিলাম।
দ্বিতীয় বার যখন
মনটা শান্ত ছিল
কারো করাঘাতে অশান্ত
হল
আমি স্তব্ধ হলাম।
দ্বিতীয় বার যখন
হৃদয় ভাঙলো
সেবার আমি কাদিনি
তবে খুব কষ্ট
পেয়েছিলাম।
তাই আর কারো হাতছানি
আমায় কাছে ডাকতে
পারেনি,
বিশ্বাস ভাঙা হৃদয়ে
আর,
কখনো এতটুকু বিশ্বাস
জমেনি।
কিন্তু হঠাৎ -
কেউ একজন চুপিসারে
হৃদয়ের ঘরে সিঁধ
কেটে
আমার ঘুমন্ত হ্রিদয়ে,জাগ্রত নিরাশাকে
আশার আলেয়াতে আলো
জ্বালালো।
হঠাৎ আলোর ঝলসানিতে
যখন
এই হৃদয় ঝলসে যাচ্ছে,
বিশ্বাস ভাঙা হৃদয়ে
বিশ্বাসের
চারাগাছে দু একটা
কচি পাতা গজিয়েছে
ঠিক তখনই-
ঠিক তখনি,আবারো সেই একই পরিনতি।
বুকের পাঁজর দুমড়ে
মুচড়ে গেলো,
হৃদয়ে বিশ্বাসের আলো
নিভে গেলো,
ভেঙে গেলো সাজানো
স্বপ্ন,
স্বপ্নের বাসর।
বেদনার নীল বিষে,
কস্তের ছুরিতে
হৃদয়টা রক্তাক্ত,
ঝরে গেলো সব-
একটা হৃদয়,
কিছু স্বপ্ন
কিছু ভালবাসা,
কিছু আশা।।
কিন্তু-
কিন্তু আমি কাদিনি-
বুকের ভেতর থেকে
কস্তের অট্টহাসিতে
করেছিলাম পৃথিবী
প্রকম্পিত।
আজ আর,
কষ্ট পাই না, কষ্ট বুঝি না-
শুধু হাসতে জানি।
হা হা হা আমি হাসতে
জানি।।
আবার আমি ফিরে
আসব
জ্বলন্ত
প্রদীপ নিভে দিলেই আমি ফিরে আসবো,
ক্লান্ত সূর্য
দিগন্তে হারালেই;
গোধূলির রঙ
মিশে যেতেই
আবার আমি ফিরে
আসবো।
তোমার চোখের
কার্নিশে জমা হওয়া
বেদনার আশ্রু
লুকাতে আমি ফিরে আসবো,
আশাহত হৃদয়ে
তোমার,
স্বপ্নের রঙ
ছড়াতেই,আমি আবার ফিরে আসবো।
তোমার নগ্ন
শরীরের লজ্জা ঢাকতে
এক পৃথিবী
চাদর হয়ে,আমি ফিরে আসবো,
বেদনার
জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া,
থর থর করে
কেঁপে উঠা
তোমার ভীতু
চোখের চাহনি লুকাতে,
আমি আবার ফিরে
আসবো।
আমি তমার,তুমি
আছ যার,
আমি সেই
ঘুটঘুটে অন্ধকার।।
http://24evergreenlove.simplesite.com
অ-ফেরা
-নীলকান্ত
তোমার দু নয়নে অশ্রু কেন তবে ?
আমায় পর করে,
ভেঙেছে কি হৃদয়ের ঘর
আচমকা কোন ঝড়ে ?
তোমার ভালোবাসার ভিত্তি ছিল দূর্বল
স্যাতস্যাতে মাটির দেয়াল
তাইতো ভেঙেছে ঝরে
করনি খেয়াল ।
হঠাৎ এত দীর্ঘশ্বাস কেন তবে?
আমায় দুরে ঠেলে ।
পাওনি কি ভালোবাসা ততটুকু
যতটুকু চেয়েছিলে ?
তোমার চাওয়ার পরিধিটা ছিল অনেকটা
বিনা মুলধনের ব্যাবসা,
তাইতো পাওনি কিছুই
যতটুকু ছিল আশা ।
কিছুই পেলে না যখন,ছুটে চলে মিথ্যে মোহে
ফিরেই বা আসলে না কেন আর !
কিছুই কি দেইনি তোমায় ভালোবেসে
যতটুকু চেয়েছিলে তার ?
আমার হৃদয়ের দরজা ছিল খোলা,
কলিংবেল চাপার আগেই ছিল
তোমার প্রবেশের আহ্বান;
তবে,ফিরে আসলে না কেন আর ??
মৃত্যুর তৃপ্তি
মৃত্যুর তৃপ্তি
এস এম হারুন অর রশিদ
ওদের রক্তের পিপাসা মেটেনি ওরা রক্ত পিপাসু,পশুর দল। নেড়ে কুকুরের মত। নেড়ে কুকুরের মত চেটে চেটে খেয়েছে ঐ পশুগুলো, রাজপথে যে তাজা রক্ত ঢেলেছিলাম আমি- আমরা। হিংস্রে নেকড়ের মত, টেনে-হিঁচড়ে আমার আমাদের লাশগুলো করেছিল বীভৎস। রাইফেলের বেয়ানট দিয়ে, শকুনের মত খুবলে, খুবলে, আমায়- আমাদেরকে করেছিল, ক্ষত- বিক্ষত। পশু ওরা, ওরা কুকুর,হায়না- শকুনের দল।
সবার অলক্ষে আমার যে লাশ পুঁতে রেখেছিল, বুড়িগঙ্গার তীরে। আজ ৬৪ বছর পর কোদালের আঘাতে জেগেছি আমি। আমার লাশের গায়ে মাংশের প্রলেপ নেই। যা আছে- মাথার খুলিতে বুলেটের গর্ত আর- কয়েকটা পাঁজরের হাড়।
আমি ভেবেছিলাম, হয়ত কোন পশু, ওদের মত, রাইফেল হাতে বলবে- “ ডাল দো আন্দার, কই পরোয়া নেহি, যো ভি হো”
কিন্তু এ কি? কোন এক বাঙ্গালী ভাই মিষ্টি অথচ করুনার স্বরে বলছে- “ ইস ! কংকালটার খুলিতে বুলেটের আঘাত ! আহা !!”
আজ ৬৪ বছর পরও- কারো মুখে বাংলা কথা শুনে আমি ভুলে গেছি- সেই দুর্বিষহ পরিনতির কথা, মিছিলে সেই বুলেটের আঘাত,আমার মৃত্যু।।
ওদের রক্তের পিপাসা মেটেনি ওরা রক্ত পিপাসু,পশুর দল। নেড়ে কুকুরের মত। নেড়ে কুকুরের মত চেটে চেটে খেয়েছে ঐ পশুগুলো, রাজপথে যে তাজা রক্ত ঢেলেছিলাম আমি- আমরা। হিংস্রে নেকড়ের মত, টেনে-হিঁচড়ে আমার আমাদের লাশগুলো করেছিল বীভৎস। রাইফেলের বেয়ানট দিয়ে, শকুনের মত খুবলে, খুবলে, আমায়- আমাদেরকে করেছিল, ক্ষত- বিক্ষত। পশু ওরা, ওরা কুকুর,হায়না- শকুনের দল।
সবার অলক্ষে আমার যে লাশ পুঁতে রেখেছিল, বুড়িগঙ্গার তীরে। আজ ৬৪ বছর পর কোদালের আঘাতে জেগেছি আমি। আমার লাশের গায়ে মাংশের প্রলেপ নেই। যা আছে- মাথার খুলিতে বুলেটের গর্ত আর- কয়েকটা পাঁজরের হাড়।
আমি ভেবেছিলাম, হয়ত কোন পশু, ওদের মত, রাইফেল হাতে বলবে- “ ডাল দো আন্দার, কই পরোয়া নেহি, যো ভি হো”
কিন্তু এ কি? কোন এক বাঙ্গালী ভাই মিষ্টি অথচ করুনার স্বরে বলছে- “ ইস ! কংকালটার খুলিতে বুলেটের আঘাত ! আহা !!”
আজ ৬৪ বছর পরও- কারো মুখে বাংলা কথা শুনে আমি ভুলে গেছি- সেই দুর্বিষহ পরিনতির কথা, মিছিলে সেই বুলেটের আঘাত,আমার মৃত্যু।।