ভালোবাসা



ভালোবাসা
-নীলকান্ত

এত উৎকণ্ঠা ওর মুখে এর আগে কখনো দেখিনি। মাত্র দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে বাসায় ফিরতে। রাত এখন ১২ টা। প্রতিদিন সাড়ে ন’টা থেকে দশটার মধ্যে সাধারণত বাসায় ফিরি। আজ একটা জরুরী কাজে ফেঁসে গিয়েছিলাম, গাড়ির মধ্যে ছিলাম তাই বিরাশি বার ফোন করলেও একবারের জন্যও টের পাইনি। আর তাতেই আমার মহারানীর মুখটা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে। বাসায় ফিরে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমিই ভরকে গিয়েছিলাম।
 বললাম, “কি হয়েছে তোমার? মুখটা এমন শুকনো লাগছে যে !”
 সুপর্ণা কিছু বলল না, হু হু করে কেঁদে উঠল। দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলল, “কোথায় ছিলে তুমি? তোমার ফোনে ট্রাই করে পাচ্ছিলাম না”।
আর কিছু বলতে পারল না।  বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে কাদতে লাগল। সত্যি বলতে কি, ঘটনার আকস্মিকতায় আমি এতটাই হতবাক হয়ে গেছি যে,আমার মুখ থেকে কোন কথা বেরুলো না। আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। ওর ভালোবাসা দেখে মনে মনে আমার খুব ভালো লাগছিলো। ওর আজকের এই কাণ্ড দেখে পাঁচ বছর আগের দিনগুলি স্মৃতিপটে ভেসে উঠল।

তখন আমি কেবল অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি,আর সুপর্ণা ১ম বর্ষে। আমাদের পরিচয় টা এক বন্ধুর মাধ্যমে। তারপর একে অপরকে ভালোলাগা,ভালবাসা অতঃপর বিয়ে। আমি তখন বগুড়াতেই থাকি। আমার কলেজ থেকে ওর কলেজের ডিসটেনস মাইল পনের। আমার লেখাপড়ার সুবিধার জন্য কলেজের পাশেই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। আর ও থাকত ওর কলেজের পাশে এক মহিলা হোস্টেলে । প্রতিদিন আমরা ফোনে অনেক অনেক কথা বলতাম। রাগ করতাম,অভিমান করতাম। বেশিরভাগ সময় ও আমাকে ফোন করত।বলতে গেলে আমিই ওকে ফোন করার সুযোগই পেতাম না। কোনদিন হয়ত একটু কম কথা বলতে চাইলেই ও খুব অভিমান করত,মন খারাপ করে থাকত। অথবা টিউশানি, কলেজ বা বন্ধুদের সময় দিতে গিয়ে ওর ঠিকমতো খোঁজখবর নিতে পারতাম না। তখনো ও খুব মন খারাপ করতোতবে তা বেশি ক্ষণ স্থায়ী ছিল না। আমি ওকে ফোন দিয়ে জোকস করতাম,বা একটু রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলেই ও আর রাগ করে থাকতে পারত না। ও যদি খুব মন খারাপ করতো তখনো ওই অভিমান আধা ঘণ্টার বেশি কখনই স্থায়ী হত না। দেখা হলেই বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদত।
তখন আমারও খুব খারাপ লাগত। ভাবতাম আর কখনো এমন করব না। যদিও সে কথা পড়ে বেমালুম ভুলে যেতাম। সত্যিই তখনো সুপর্ণা আমাকে যতটা ভালবাসত আজও তার কোন অংশে কম বাসে না বরং আরও বেশিই।
আমার শুধু মনে হয়,আমিই ওকে বেশি ভালবাসতে পারিনি বোধহয়।
দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল,আমারা অনার্স শেষ করলাম মাস্টার্স শেষ করলাম। অতঃপর একদিন বিয়ে।
অনেকেই বলে,বিয়ের পর নাকি ভালোবাসা বিয়ের আগের মতো থাকে না। কিন্তু আমি মানতে নারাজ। কারণ বিয়ের আগেও সুপর্ণা আমাকে যেভাবে ভালবাসত, আজও সেরকম বা তার চেয়ে বেশি ভালবাসে। যা এই দুই ঘণ্টার দেরিতে বাসায় ফেরার পর আমি আরও একবার উপলব্ধি করলাম।

সুপর্ণা এখনও আমার বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে আছে। সত্যি বলছি,আমার মোটেও ইচ্ছা করছে না ওকে ছেড়ে দেই বা ওকে এই আলিঙ্গন থেকে আলাদা করি। ইচ্ছে করছে,যদি সারাটাক্ষণ ওকে এভাবে জড়িয়ে রাখতে পারতাম তবে বোধহয় অনেক ভালো হতো। ওর গরম শ্বাস- প্রশ্বাস আমার বুকের ভেতর শিহরণ তুলছে,আর দু চোখের লনা জলে আমার হৃদয়ে ভালবাসার স্পর্শ বুলিয়ে যাচ্ছে, এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে।।  

No comments:

প্রিয় দেবী (বিরহের চিঠি) ৩

প্রিয় দেবী, অনেকদিন পর তোমায় লিখছি। কতদিন পর! ঠিক ঠাক মনে পড়ছেনা কিছুই। শুধু মনে পড়ে, শত শত চিঠি পাঠিয়েছি বেনামী ঠিকানায় বহুদিন। হয়ত সেসব কখ...