বিরহ চিঠি

আমার হাতে পুড়ে পুড়ে ছাই হওয়া জ্বলন্ত সিগারেট দেখলে মায়া হয় তোর। মুখে চুকচুক শব্দ করে বলিস,
"ইস! এই সিগারেটটাই তোমার জীবনটা শেষ করে দিলো। "
কিন্তু যে আগুন আমার বুকে জ্বালিয়ে আমাকে তুই পুড়িয়ে কাঠ কয়লা করেছিস তার খবর রাখিস না।সত্যি আশ্চার্য তোর ভালোবাসা!!
ছেলেবেলায় একবার কলা গাছের পাতা কাটতে গিয়ে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল প্রায় হাড়াতে বসেছিলাম।সেদিন এত রক্ত ঝড়েছিলো আর ব্যাথা পাচ্ছিলাম যে, মনে হয়েছিলো আমি বুঝি আজ মারাই যাব।মা বকা দেবে বলে সেই কথাটাও মাকে বলিনি।নীরবে দূর্বা ঘাসের রস আর আমার পুরোনো গেঞ্জির কাপড় জড়িয়ে রেখেছিলাম সেখানে।কেউ যাতে বুঝতে না পারে তাই কতভাবে যে লুকিয়ে রেখেছিলাম তার ইয়াত্তো নেই।।
আজও যখন তোর কথার ছুড়িতে হৃদয়টা কেটে ফালাফালা, অবহেলার শকুনিগুলো বুকের উপর বসে হৃৎপিন্ডটা খুবলে খাচ্ছে তখনো আমি সেদিনের মতো নীরব।তুই কষ্ট পাবি কিনা জানিনা কিন্তু তারপরেও বলতে পারিনি কখনো। হয়ত সহানুভূতির মিথ্যে খোলসে ভালোবাসার সলিল সমাধি হওয়ার ভয়ে কখনো আর বলাও হবে না।
তুই কি জানিস,
সিগারেটের নিকোটিন আমাকে যতটা না শেষ করছে তার চেয়ে বেশি শেষ হচ্ছি তোর নীরবতার ছুড়িকাঘাতে!! হয়ত জানিস কিন্তু বুঝিস না।তাই ভালো থাকার মিথ্যে অভিনয়ে কত ভাবে যে সেই ক্ষত লুকিয়ে রাখছি তুই যদি বুঝতি!!
সেদিন তুই রাগ করে বললি,
"সত্যি,আমি আর পারছি না।"
তোর কথা শুনে বুকটা আরেকবার মোচড় দিয়ে উঠলো। মনে হলো,বুকের সব কটা হাড় মড় মড় করে ভেঙে হৃৎকম্পন বন্ধ করে দেবে।নিজের পাজড় ভাঙার শব্দটা কখনো শুনেছিস? শুনিস নি।শুনলে বুঝতি,কতটা কষ্টের পাহাড় জমলে বুকের পাঁজড় ভাঙে!
তারপরে বললি,
" আমি কিছুই জানি না আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি"।
তোর এই কথাটা নতুন করে আশা জাগায় আবার।হৃৎস্পন্দন ধীরে ধীরে ট্র‍্যাকে আসে।কিন্তু তা ধরে রাখতে পারলাম না তোর পরের কথায়।
তুই বললি, "ঠিক আছে আমায় আর কিছু বলতে হবে না।"
আমি বললাম," রাগ করছো??"।
তুই সেই চিরচেনা অবস্থায় ফিরে গিয়ে বললি," না, আচছা ভালো থাক।"
তারপর হুট করে হারিয়ে গেলি।
তুইই বল,তারপরে আবার কিভাবে আমি স্বাভাবিক থাকি? কিভাবে স্বপ্ন সাজাই? স্বপ্ন দিয়ে ভালোবাসার জন্য যে ঘর আমি গড়ে তুলেছিলাম সেই ঘর তুই এক নিমিষে তাসের ঘরের মত ভেঙে ফেললি।
একদিন অভিমান করে বললি,
আমার জন্য নাকি কোন পরী আছে।সেদিন তোর অভিমানী মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে করেছিলো।কাছে থাকলে তোর উষ্ণ ঠোটে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বলতাম,"আমার পরী-টরী লাগবে না,আমার এই দেবীকেই চাই।"যাকে ভালোবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেব।
কিন্তু কি আশ্চার্য দেখ! তুই সেই সুযোগটাও কখনো দিলিনা।
তোর কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চেয়েছিলাম কি? শুধু হাসি মুখে দুটো কথা আর দু দন্ড শান্তি ছাড়া?


#নীলকান্ত (বিরহ)

No comments:

প্রিয় দেবী (বিরহের চিঠি) ৩

প্রিয় দেবী, অনেকদিন পর তোমায় লিখছি। কতদিন পর! ঠিক ঠাক মনে পড়ছেনা কিছুই। শুধু মনে পড়ে, শত শত চিঠি পাঠিয়েছি বেনামী ঠিকানায় বহুদিন। হয়ত সেসব কখ...