আমার দরিদ্র শব্দ ভান্ডার

ফেসবুক, টুইটার,ব্লগ,পত্রিকা এরকম বেশ কিছু জায়গায় মাঝে মাঝে কিছু লেখার চেষ্টা করি। তবে কোন সাহিত্যিক বা পেশাদার লেখক হিসেবে না।সেসব লেখা হয়ত কেউ পড়ে হয়ত পড়ে না। কিন্তু একরকম ভালো লাগা থেকেই এসব করে আসছি।

আজ হঠাৎ একজন আমাকে প্রশ্ন করল,
"আচ্ছা ভাইয়া, আপনি গল্প, কবিতা কিংবা অন্য লেখাগুলোতে এত সস্তা শব্দ ব্যবহার করেন কেন?"
আমি একটুকুও অবাক না হয়ে বললাম,"ভাইরে,আমার শব্দ ভান্ডার এত দরিদ্র যে এর চেয়ে দামী শব্দ রাখতে পারিনা।"

শেষ পর্যন্ত মেয়েটি আমাকে পরামর্শ দিল এভাবে, " আপনি রবীন্দ্রনাথের,নজরুল, বঙ্কিমের লেখা গুলো বেশি বেশি করে পড়েন।আর সেখান থেকে কিছু শব্দ ব্যবহার করেন দেখবেন আপনার লেখা আরো ভালো লাগবে।"
আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বললাম,"পড়ব"।
আর মনে মনে ভাবলাম,
"হায়রে,  বঙ্কিমের দূর্গেশনন্দীনি প্রথম যখন পড়েছিলাম  তখন আমি ক্লাস সিক্সে। আর রবি ঠাকুরের গোরা পড়েছিলাম ৫ম শ্রেনীর বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে অবসরে।  সেদিন আমার দাত অর্ধেক ভেঙেছে।তারপর আরো চার পাচ বার পড়ে তবেই উপন্যাসের সারকথা বুঝেছিলাম।আর এই মেয়েটি সেই দুঃসাধ্য সাধনের পরামর্শ দিচ্ছে।"
এই মেয়েকে কি করে বলব যে,দাত ভাঙার ভয়ে আর কোনদিন বঙ্কিমের উপন্যাস ধরার সাহস পাইনি।যদিও কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী,বিষবৃক্ষ,ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়,চন্দ্রশেখর, রাধারানী,রজনী,কৃষ্ণকান্তের উইল,রাজসিংহ,আনন্দমঠ,দেবী
চৌধুরানী মোটামুটি দু একবার করে পড়া হয়ে গেছে।তারপরেও কোনদিন বঙ্কিমের শব্দ চুড়ি করার কথা ভাবিনি।কিন্তু এই মেয়েটা বলছে সেটাই নাকি আমার লেখার মান আরো বৃদ্ধি করবে।শব্দ নাকি আরো ধনী হবে!
কিন্তু গরীবের ঘরে কি রাজার ধন মানাবে???
অগত্য বাধ্য হয়ে একবার শরৎ বাবু কে মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করলাম।বাবু একটু রাগ করতে চাইলেন।কিন্তু আমি দাদা ঠাকুরের দোহাই দিয়ে চুপ করালাম।

কলম হাতে নিয়েছি,খাতা পত্র সামনে পড়ে আছে আর রবি ঠাকুরের মত বলছি,"কোথায় আছো বঙ্কিম চন্দ্র(রবি ঠাকুরের নিবারন চক্রবর্তীরর স্থলে)ভর করো আমার উপর। বাণী দাও,বাণী।"
ঘন্টা দুয়েক একই ভাবে বাণী চেয়ে যখন আমি ক্লান্ত তখন শরৎ বাবু মুচকি হেসে বললেন,"ওরে নীলকান্ত,  তুই যেমন ছিলি তেমনি থাক।বঙ্কিম হতে চাস না।"
বাধ্য হয়ে রবি ঠাকুর আর নজরুলের সাথে সখ্য গড়তে চাইলাম।কিন্তু সেখানেই ব্যর্থ।
অবশেষে নীলকান্তের উপর শেষ ভরসা।।
কোথায় আছো নীলকান্ত? ভর করো আমার উপর।বাণী দাও, বাণী।।।

<"নীলকান্ত ">
www.facebook.com/swopnonil

No comments:

প্রিয় দেবী (বিরহের চিঠি) ৩

প্রিয় দেবী, অনেকদিন পর তোমায় লিখছি। কতদিন পর! ঠিক ঠাক মনে পড়ছেনা কিছুই। শুধু মনে পড়ে, শত শত চিঠি পাঠিয়েছি বেনামী ঠিকানায় বহুদিন। হয়ত সেসব কখ...