হা-ভাত

চরম ক্ষুধা লেগেছে। মেসে গেলাম খাওয়ার জন্য।বাটা মাছের সাথে লাউ এর তরকারি। যদিও আমি মাছ খাইনা তবে মাছের ঝোল খেতে পারি।যাই হোক মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাচ্ছি।খাওয়া প্রায় শেষের দিকে হঠাৎ একজন মধ্য বয়সী লোক মেসের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো।আমাকে দেখে সালাম দিলো।আমি মুখের মধ্যে ভাত নিয়ে ইশারায় বললাম, কি চাই? উনি আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলল,"একটু ভাত খাবো।অল্প একটু হলিও চলবি।"
আমি আমার প্লেটের দিকে তাকালাম।তিন ভাগের এক ভাগ ভাত আছে।সাথে মাছের টুকরা টা।আমি আর এক গ্রাসও মুখে নেয়ার চেষ্টা করলাম না।জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা, আপনার বাড়ি কোই?
চাচা বললেন,"হাড়িয়ালকান্দি।আমার বিটির বিয়ের সাহায্যের জন্যি হাটের মধ্যি ট্যাকা তুললেম।রাইত হয়্যা গেলো।ক্ষিদে লাগছে।"
ততক্ষনে আমার হাতের প্লেট নিয়ে ডাইনং এ চলে এসছি।মেসের ছোট ভাইরাও আমার সাথে এসে যোগ দিয়েছে ইতিমধ্যে।আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখো তো একটা প্লেট ধুয়ে দাও।আমার কথা শুনে লিপন,হৃদয় আরো দুই জন ছোট ভাই কেউ পানি নিয়ে এলো,কেউ মগ টা এগিয়ে দিচ্ছে কেউ বা জগে করে পানি ভরে নিয়ে এসে দিলো।লিপন একটা প্লেট ধুয়ে এগিয়ে দিলো আমার কাছে।আমি আমার প্লেটের অবশিষ্ট ভাতগুলো ঐ প্লেটে ঢেলে দিলাম। নিজের কাছে খারাপ লাগছিলো এই ভেবে যে আমি তাকে পেট ভরে খেতে দিতে পারলাম না।ডাইনং এর ঘটি বাটি খুঁজে ইউনুছ ফুয়াদের বাটি থেকে কিছু ভাত তুলে দিলো লোকটির প্লেটে।তারপরেও এই ক্ষুধার্ত মানুষটার জন্য তা ছিলো অপর্যাপ্ত।
মনে মনে ভাবলাম, হায়রে! প্রতিদিন সকাল বিকাল কত ভাত না আমরা নষ্ট করি আর কিছু কিছু মানুষ এক বেলা পেট পুরে ঠিকমতো খেতেও পারে না।
ক্ষুধার জ্বালা আমরা বুঝি না।কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পরিও নি যখন খুব ক্ষুধা লেগেছে কিন্তু খাবার কিছু নেই। তাই কত খাবার আমরা নষ্ট করি।
কোনদিন কি একবারো এই লোকদের কথা আমরা ভেবে দেখেছি? দেখিনি।

আমরা প্রতিদিন মেসে বা বাড়িতে যে খাবার নষ্ট করি তা হয়ত অন্য কারো একবেলা ক্ষুধা নিবারনের কাজে লাগতে পারত।

বেচারা খেয়ে যাচ্ছে আর আমি দেখছি।ক্ষুধা কাকে বলে!

www.facebook.com/swopnonil

No comments:

প্রিয় দেবী (বিরহের চিঠি) ৩

প্রিয় দেবী, অনেকদিন পর তোমায় লিখছি। কতদিন পর! ঠিক ঠাক মনে পড়ছেনা কিছুই। শুধু মনে পড়ে, শত শত চিঠি পাঠিয়েছি বেনামী ঠিকানায় বহুদিন। হয়ত সেসব কখ...